বুধবার ০১ মে ২০২৪
Online Edition

খুলনায় নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজির দু’টি মামলায়  সিআইডি’র তদন্তে এসআই সোহেল রানা বাদ!

 

খুলনা অফিস : খুলনা মহানগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার একটি ফ্লাটে এক ব্যবসায়ী ও একজন সরকারি কর্মকর্তাকে নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগের পৃথক দু’টি মামলায় এসআই সোহেল রানাকে চার্জর্শিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মো. মেহেদী হাসান মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গত ১৬ জুলাই পৃথক দু’টি চার্জর্শিট দাখিল করেন। খুলনার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সুমি আহমেদ দু’টি মামলার বাদীকে আদালতে হাজির হওয়ার নোটিশ দিয়েছেন। কিন্তু একটি মামলার বাদি নগরীর আপার যশোর রোডের এশিয়া স্টিল ফার্ণিচারের মালিক মো. রফিকুল ইসলাম আদালতে হাজির হলেও অপর বাদি ভূমি কর্মকর্তা রমজান আলী হাজির হননি। বর্তমানে চার্জশিট বিষয়ে আদেশের জন্য মহানগর হাকিম মো. আমিরুল ইসলামের আদালতে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারিত রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট সদর থানায় দায়ের হওয়া মামলার (নম্বর ১৬) বাদি ভূমি কর্মকর্তা রমজান আলী। এই মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে সিআইডি’র তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা চার্জশিটে স্বপ্না আক্তার রুনা, সীমা, মো. রাজু শেখ, মো. আব্দুল হামিদ ও মহিন আরা বেগমকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এসআই সোহেল রানাসহ বাকিদের চার্জশীট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে (অভিযোগ পত্র নং-২৫৪)।

অন্যদিকে একই দিনে একই ধরণের অভিযোগে সদর থানায় দায়ের হওয়া মামলার (নম্বর ১৭) বাদি নগরীর আপার যশোর রোডের এশিয়া স্টিল ফার্ণিচারের মালিক মো. রফিকুল ইসলাম। এ মামলায় এসআই সোহেল রানাসহ এজাহারভুক্ত আসামি ৬ জন। এই মামলায় গত ১৬ জুলাই সিআইডি’র তদন্ত কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান আদালতে (অভিযোগপত্র নং-২৫৪) দাখিল করেন। ওই চার্জশিট থেকেও সোহেল রানাসহ দু’জনকে বাদ দেয়া হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে ভূমি কর্মকর্তা মো. রমজান আলীর ব্যবহৃত মোবাইলে কল করে বিপদে পড়েছি উপকার করেন এমনি কৌশলে মুন্নি বেগম নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার ১৭ নম্বর রোডের ২৯৫নং ভাড়া বাড়িতে তাকে ডেকে নেয়। সেখানে গেলে স্বপ্না আক্তার রুনা তাকে একটি রুমের মধ্যে নিয়ে খাবার কিনতে যাবার উছিলায় বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর সীমা, স্বপ্না, রাজু শেখ, মহিন আরা বেগম এবং স্থানীয় নিরালা পুলিশ ফাঁড়ির আইসি (ইনচার্জ) এস আই সোহেল রানাসহ কয়েকজন ঘরে ঢুকে তাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে সীমাকে নগ্ন করে তার পাশে দাঁড় করিয়ে এস আই সোহেল রানা তার মোবাইলে ভিডিও করে। পরে এস আই সোহেল রানা কেএমপি কমিশনার, ডিসি এবং ওসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টাকা দিতে হবে বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে রমজান আলীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। না দিলে রেকর্ডকৃত ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় এস আই সোহেল রানা। এ অবস্থায় রমজান আলী বাধ্য হয়ে তার স্ত্রীর মাধ্যমে এস আই সোহেল রানার নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনা সদর থানা সংলগ্ন বিকাশ এজেন্ট আব্দুল হামিদের নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। আরও ১০ হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি তাদের কবল থেকে ছাড়া পান। এ ঘটনার পর গত ১৫ আগস্ট ভূমি কর্মকর্তা মো. রমজান আলী বাদি হয়ে এস আই সোহেল রানাসহ ৬ জনকে আসামি করে খুলনা সদর থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। এছাড়া রফিকুল ইসলাম নামের আরও এক ব্যক্তিকে একই ফাঁদে ফেলে চাঁদা দেয়ার অভিযোগে তিনিও উল্লেখিত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। দু’টি মামলায় এস আই সোহেল রানাসহ ৫ জনকে মামলা দায়েরের পরপরই গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ। তাদের মধ্যে ৪ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।

এর মধ্যে ১৬ নম্বর মামলায় চার আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। গত বছরের ২২ আগস্ট আসামি মো. রাজু শেখ আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে বলেন, নিরালা আবাসিকের ১৭ নম্বর রোডের ২৯৫ নম্বর বাড়ির ওই ফ্লাটটি ভাড়া নিয়ে তিনি ও তার স্ত্রী মহিন আরা বেগম বসবাস করেন। সেখানে তারা অন্য মেয়েদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করান। ঘটনার দিন রমজান আলী খদ্দের হিসেবে স্বপ্না আক্তার রুনার মাধ্যমে ওই বাসায় গিয়েছিলেন। এছাড়া সেদিনের ঘটনায় পুলিশের উপস্থিতিসহ চাঁদা আদায়ের ঘটনাও স্বীকার করেন তিনি। এর আগে গত ২০ আগস্ট মামলার আসামি স্বপ্না আক্তার রুনা ও সীমা মহানগর হাকিম মো. ফারুক ইকবালের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।

স্বপ্না আক্তার রুনা তার দেয়া জবানবন্দীতে বলেন, ৭/৮ বছর আগে থেকেই ভূমি অফিসের কর্মকর্তা মো. রমজান আলীর সাথে তার পরিচয় রয়েছে। গত এক দেড় মাস আগে নগরীর ডাকবাংলা মোড়স্থ বাংলাদেশ বেকারীর সামনে তাদের দু’জনের দেখা হয়। এ সময় ভূমি অফিসের কর্মকর্তা রমজান আলী ও স্বপ্না আক্তার রুনার মধ্যে প্রায় ১০/১৫ মিনিট কথা হয়। দু’জন দু’জনের মোবাইল নম্বর দেয়া নেয়া করেন। রমজান আলী এ সময় রুনাকে বলেন, ভাল চেহারার ছোট মেয়ে থাকলে আমাকে মোবাইলে জানাবেন। সেই মতে গত ১৪ আগস্ট বেলা ১১টা ৩০ মি. সময় রুনা তার পূর্ব পরিচিত রমজান আলীর মোবাইলে ফোন দিয়ে খুলনার নিরালা আবাসিকের ওই বাড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানায়। দুপুর ১২টায় রমজান আলী সেই বাড়ির সামনে হাজির হয়। এরপর ওই ফ্লাটের কক্ষে তাকে নিয়ে যায় রুনা।

সীমা তার দেয়া জবানবন্দীতে বলেন, স্বপ্না আক্তার রুনা আপার সাথে রমজান আলী নামের ওই ব্যক্তি ফ্লাটে আসেন। এরপর তিনি অন্য আর দশ জনের মতোই টাকার বিনিময়ে আমার সাথে দৈহিক সম্পর্ক করেছেন। কিছু সময় পর সেখানে পুলিশের উপস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করেন তারা। গত ১৮ আগস্ট এ মামলার অপর আসামি বিকাশ এজেন্ট মো. আব্দুল হামিদ মহানগর হাকিম আয়েশা আক্তার মৌসুমীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন । তার বিকাশ এজেন্ট নম্বরে টাকা লেনদেনের বিষয়ে আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে বলা হয়।

প্রথমে মামলাটি তদন্ত শুরু করেন সদর থানার এসআই এস আই তাপস কুমার রায়। এরপর নগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি’র পরিদর্শক মমতাজুল হক। তদন্ত চলাকালীন হঠাৎ করেই মামলাটি সিআইডিতে তদন্তের জন্য চলে যায়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ